দলিল লেখকদের কর্মবিরতি, সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ,।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে নেমেছেন স্থানীয় দলিল-লেখকরা।
সোমবার দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করছেন উপজেলার দলিল-লেখকরা। ফলে জমি নিবন্ধন করতে আসা দাতা-গ্রহীতারা চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
দলিল-লেখকদের অভিযোগ, শ্রীমঙ্গলে সম্প্রতি আসা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর প্রতি দলিলের মূল্যের ওপর ১ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন না দিলে কোনো দলিল করতে চান না,।
তাছাড়া প্রতিটি দানপত্র দলিল, এওয়াজ দলিল, ওছিয়তনামা দলিল, বায়না দলিল, নাদাবি দলিল, বাটোয়ারা দলিল, হেবা দলিল থেকে ৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে থাকেন। দলিল-লেখকদের কেউ শংকর কুমার ধরের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে চাইলে তিনি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যসহ অসদাচরণ করে থাকেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা দলিল-লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুর রহমান বলেন, শ্রীমঙ্গলে গত ফেব্রুয়ারি মাসে শংকর কুমার ধর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সময়ে দলিল লেখকরা এর প্রতিবাদ করলেও কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো তাদের সঙ্গে অসদাচরণসহ নানা কারণ দেখিয়ে দলিল না করার হুমকি দিয়ে অনিয়মের মাত্রা বাড়িয়ে দেন তিনি। দলিল রেজিস্ট্রি করতে গেলে দলিলপ্রতি ১ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দাবি করেন। অন্যথায় তিনি দলিল করতে নারাজ,।
তিনি আরও বলেন, এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে আমরা একাধিকবার সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধরের সঙ্গে বৈঠকে বসেছি, কোনো সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সব দলিল লেখকদের সঙ্গে নিয়ে কর্মবরিত পালন করছি। বিষয়টি সমাধানের আগ পর্যন্ত আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরা দলিল লেখা বন্ধ রাখবো।
উপজেলা দলিল-লেখক সমিতির সভাপতি মো. ছায়েদ আলী বলেন, অতিরিক্ত টাকা ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। এমনকি উত্তরাধিকার দলিলেও অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। নানা অজুহাতে তিনি সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন হয়রানি করেন। আমরা যারা দলিল-লেখক রয়েছি তাদের মধ্যে অনেকেই বয়স ও পেশায় সিনিয়র ব্যক্তি রয়েছেন তাদের সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেন।
দলিল-লেখকদের এই কর্মবিরতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাগ্রহীতারা,।
হবিগঞ্জ থেকে সেবা নিতে আসা আব্দুল আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, রমজান মাসে অনেক দূর থেকে দলিল করতে এসে ফিরে যাচ্ছি। দলিল করতে না পারলে আমার খুব সমস্যা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন এ সমস্যার যেন দ্রুত নিরসন হয়।
পারমিতা দেবনাথ নামের এক নারী বলেন, জমি বিক্রি করছি, কিন্তু দলিল না হওয়ায় টাকা পাচ্ছি না। আজকে অফিসে দলিল করতে এসে ঘুরে যাচ্ছি,।
এদিকে, কর্মবিরতির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা দলিল-লেখক সমিতির সভাপতি মো. ছায়েদ আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুর রহমানসহ সমিতির কয়েকজন নেতাকে নিয়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর তার কক্ষে এক বৈঠকে বসেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী আলাপ-আলোচনা হলেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি,।
তবে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা সত্য নয়। আমি সরকারি ফির বাইরে কারও কাছ থেকে বাড়তি কোনো ফি নেইনি। জমি নিবন্ধন আইন দিন দিন আপডেট হচ্ছে। নতুন ভূমি আইন বাস্তবায়নে দলিল-লেখকদের বা জমি মালিকদের আপত্তি থেকে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, কর্মবিরতির বিষয়টি শুনেছি। দলিল-লেখকদের বক্তব্য কী তারা আমাকে আগে লিখিতভাবে জানাক, যদি সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের কোনো অভিযোগ থাকে, তারা আমাকে লিখিতভাবে জানালে আমি তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবো,।