শ্বশুর ও ননদ গ্রেফতার : গৃহবধূকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা।
রংপুরে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তার শ্বশুর ও ননদকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার (১২ এপ্রিল) ময়মনসিংহের ফুলবাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র্যাব বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা গৃহবধূকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেফতার দুই জনকে বুধবারেই নিয়ে আসা হয় রংপুরে। পরে রাত ১১টার দিকে রংপুর নগরীর আলমনগর স্টেশন এলাকায় নিজেদের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১৩ এর প্রধান কমান্ডার আরাফাত ইসলাম। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ সালমা বেগম। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, তার শ্বশুর আখতার মিয়া এবং ননদ আলেয়া বেগম। আখতার মিয়া রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ থানার নাচনিয়া মহল্লার মৃত আব্দুল মিয়ার ছেলে। আর ননদ (আখতার মিয়ার মেয়ে) একই থানার খাসবাগ এলাকার রমজান আলীর স্ত্রী। র্যাব জানায়, চার বছর আগে ভালোবেসে আখতার হোসেনের ছেলে স্বপন মিয়ার সঙ্গে সালমা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর, ননদসহ তাদের বাড়ির লোকজন যৌতুক হিসেবে ২ লাখ টাকা দাবি করে আসছিলেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা প্রায়শই সালমাকে নির্যাতন করতো। এর মধ্যে নিহত গৃহবধূ সালমা বেগম একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার ঋণ নেন। সেই ঋণ নেওয়া টাকা থেকে আলেয়া বেগম ১০ হাজার টাকা ধার নেন। গত ২৪ মার্চ নিহত গৃহবধূ সালমা বেগম তার ননদের কাছে ধারের ফেরত টাকা চাইলে ননদ আলেয়া বেগম ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার স্বামী স্বপনের সামনেই তাকে মারধর করে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, পাওনা টাকা না দিয়ে উল্টো যৌতুকের টাকার জন্য তারা সালমাকে চাপ দেয়। টাকা না দিলে সংসার করতে দেবে না বলে হুমকিও দেয়। এরই জের ধরে গত ২৮ মার্চ তারিখে নিহতের শ্বশুর, ননদসহ তাদের বাড়ির লোকজন বাদানুবাদের এক পর্যায়ে গৃহবধূ সালমা বেগমের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৭০ ভাগ পুড়ে যায়। কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, সালমা বেগমকে উদ্ধার করতে গিয়ে তার স্বামী স্বপনও দগ্ধ হন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় দগ্ধ স্বামী স্বপন ও ভিকটিম সালমাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ মার্চ তারিখে মারা যান সালমা বেগম। এ ঘটনায় তার স্বামী স্বপন মিয়া নিজে বাদী হয়ে রংপুর মেট্রোপলিটনের মাহিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। র্যাব জানায়, মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকেই র্যাব আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। অবশেষে গোপন সংবাদের উপর ভিত্তি করে বুধবার ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ি এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব। আসামিদের সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলেও জানিয়েছে র্যাব।