শিশু অপহরণ ও বিক্রি, আটক ২,
লালন পালন করার কথা বলে ১৭ মাসের এক শিশুকে গাজীপুর থেকে অপহরণ করে বিক্রি করে দেয়ার পর শিশুটিকে চাঁদপুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় অপহরণকারী ও শিশুটির ক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাদের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হলে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। উদ্ধারকৃত শিশুর নাম মো. রুহান মোস্তফা (১৭ মাস)। সে রংপুর মহানগরীর হারাগাছ থানাধীন চালকুঠি এলাকার মো. আজিজুল ইসলামের ছেলে। শিশুটির বাবা-মা গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন উত্তর বিলাশপুর এলাকায় সামাদের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।
গ্রেপ্তারকৃত অপহরণকারী মো. শরিফুল আলম লিটন (৪৫)। তিনি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার কোদালিয়া এলাকার মো. শফিউল আলমের ছেলে। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারের ভাড়া বাড়িতে পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকেন। গ্রেপ্তার ক্রেতার নাম মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৯)। চাঁদপুর জেলার মতলব থানাধীন চর মাছুয়া এলাকার মো. আক্কাস আলী মোল্লার ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন উত্তর বিলাসপুর এলাকায় দুলাল মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া। জিএমপি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম জানান, শিশুটির বাবা-মা গত ১০ জানুয়ারি গ্রামের বাড়ি থেকে গাজীপুর এসে শিশুপুত্রসহ ভাড়া বাসায় ওঠেন। পরে তারা স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি নেন। আসামি মো. শরিফুল আলম লিটন তাদের ভাড়া বাসার পাশের কক্ষের ভাড়াটিয়া। পাশাপাশি কক্ষে থাকার কারণে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। এ সুযোগে আসামি কৌশলে তাদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলে। আজিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী দুইজনেই গার্মেন্টসে চাকরি করার সুবাদে আসামি শরিফুল শিশু রুহান মোস্তফা (১৭ মাস)কে লালন পালন করার ইচ্ছা পোষণ করে এবং আজিজুলকে তা জানায়। ওই শিশুর বাবা সরল বিশ্বাস করে তার শিশু সন্তানকে লালন পালন করার দায়িত্ব দেয়। এজন্য আজিমুল আসামিকে মাসিক ৩ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১১ জানুয়ারি আজিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শিশুটিকে আসামির নিকট রেখে কর্মস্থলে চলে যায়। এই সুযোগে আসামি শরিফুল শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে শিশুটিকে মো. জাহাঙ্গীর আলমের নিকট ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরে মো. জাহাঙ্গীর আলম শিশুটিকে নিয়ে চাঁদপুরের গ্রামের বাড়ি চলে যায়। অপরদিকে অপহরণকারী শরিফুল দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে সর্বশেষ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ ঘাট থানাধীন পতিতাপল্লী এলাকায় আত্মগোপন করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, এ ঘটনায় শিশুটির বাবা গত বুধবার রাতে (২২ ফেব্রুয়ারি) থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে আসামির অবস্থান শনাক্ত করে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ ঘাট থানাধীন পতিতাপল্লী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের বাড়িতে ঐ রাতেই অভিযান চালিয়ে শিশু রুহানকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটির বাবা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি আমার শিশুপুত্রকে লালন পালন করার জন্য দিয়েছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম সে হয়ত আমার ছেলেকে লালন পালন করছে। কিন্তু আসামি আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করে আমার শিশুটিকে বিক্রি করে দেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে বুধবার থানায় অভিযোগ করি। পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ আমার ছেলেকে উদ্ধার করে দিয়েছে। জিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) আহসানুল হক জানান, গ্রেপ্তারের পর আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। পরে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সহকারী পুলিশ কমিশনার আরও জানান, উদ্ধার শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে তার মা-বাবার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।