টেস্ট মানব শরীরে দেওয়া হলো ল্যাবে তৈরি রক্ত।
প্রথমবারের মতো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগারে (ল্যাব) তৈরি রক্ত মানব শরীরে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন গবেষণা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। এই পরীক্ষায় যে পরিমাণ রক্ত মানুষের দেহে ঢোকানো হয়েছে তা খুবই সামান্য- কয়েক চামচ মাত্র। এই রক্ত কতটা কাজ করে, সেটা দেখাই এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য। মানুষের দেহে যে রক্ত সঞ্চালন করতে হয়, সেটা এখনো প্রায় সব ক্ষেত্রেই মানুষের দেহ থেকেই নিতে হয়। এজন্যে বহু মানুষ নিয়মিত রক্তদান করেন। গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখছেন, এ রক্ত মানব শরীরে কেমন কাজ করে। যেসব রক্তের গ্রুপ বিরল সহজে মেলে না, সেই গ্রুপের রক্তের সঙ্কট মেটাতে এই পরীক্ষার পথে হাঁটছেন তারা। ব্রিস্টল, কেমব্রিজ ও লন্ডন এবং ব্রিটিশ ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের গবেষকরা সম্মিলিতভাবে এ প্রজেক্টে কাজ করেছেন। এ গবেষণায় লোহিত কণিকার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা ফুসফুস থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে। যেভাবে কাজ করে এটি- ১. স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দান করা এক পাইন্ট রক্ত দিয়ে কাজটি শুরু হয়। ২. এরপর এ রক্ত থেকে চুম্বকের মাধ্যমে এমন কিছু নমনীয় স্টেম সেল বের করা হয় যেগুলোর লোহিত রক্ত কণিকায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ৩. এরপর গবেষণাগারে এগুলোকে বেশি সংখ্যায় বড় করতে এমনভাবে রাখা হয় যাতে এগুলো পূর্ণাঙ্গ লোহিত কণিকায় পরিণত হতে পারে। ৪. এ প্রক্রিয়াটি শেষ হতে প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগে এবং এ সময়ে পাঁচ লাখ স্টেম সেল থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করা যায়। সেখান থেকে ফিল্টার করে ১৫ বিলিয়ন লোহিত কণিকা রাখা হয়। এরপরই সঠিক সময়ে তা গ্রহিতার শরীরে দেওয়া হয়। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যাশলে টয়ি বলেন, আমরা ভবিষ্যতে আরও রক্ত তৈরি করতে চাই। তিনি জানান, প্রথমবারের মতো এ পরীক্ষায় দুজন অংশ নেন। পরে আরো ১০ জন স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এ পরীক্ষা চালাতে চান গবেষকরা। তারা প্রতিমাসে ৫-১০ মিলি লিটার রক্ত শরীরে নেবেন। যার একটা থাকবে স্বাভাবিক রক্ত, আরেকটা ল্যাবে তৈরি রক্ত। সেখানে দেখা হবে কোন রক্ত মানব শরীরে কতদিন টিকে থাকে। গবেষকদের প্রত্যাশা ল্যাবে তৈরি রক্তের কার্যকরিতা স্বাভাবিক রক্তের চেয়ে বেশি হবে। সাধারণত শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা টিকে থাকে ১২০ দিনের মতো। রক্তের প্রকারভেদে এ সময়ে কম বেশি হয়। তবে ল্যাবে তৈরি লোহিত কণিকা ১২০ দিন টিকে থাকবে বলে দাবি গবেষকদের। তবে সাধারণ রক্তদানের চেয়ে এ রক্তের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। যদিও গবেষকরা কী রকম খরচ পড়বে সে তথ্য জানাননি। এনএইচএসের ব্লাড এন্ড ট্রান্সফিউশনের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ড. ফররুখ শাহ বলেন, ‘এই গবেষণার মাধ্যমে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের ভিত্তি রচিত হচ্ছে। সিকেল সেলের মতো রোগে আক্রান্ত মানুষের দেহে এই রক্ত নিরাপদে সঞ্চালন করা যাবে।’ ‘যাদের জন্য রক্ত পাওয়া খুব কঠিন, সেই সব রোগীর জন্য এই গবেষণার বিরাট সম্ভাবনা আছে।