রাশিয়ার ভূতুড়ে নিউক্লিয়ার ট্রেন কী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পরমাণু অস্ত্র ছোড়ার কথা মনে এলে অনেকেই ভাবেন যে, আকাশপথে জেটবিমান থেকে উড়ে এসে শত্রুপক্ষের মাটিতে গিয়ে পড়বে সেটি। যার আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাবে বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে রাশিয়ার অস্ত্রাগারে রয়েছে এমন একটি অস্ত্র যেটি নিউক্লিয়ার ট্রেন নামে পরিচিত, চলে রেলপথে। কেমন দেখতে সেই নিউক্লিয়ার ট্রেন? এর ভেতরেই বা কী রয়েছে? হালের প্রযুক্তির কল্যাণে যুদ্ধকৌশলের সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রসম্ভারও অত্যাধুনিক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর হাতে উঠে এসেছে ট্রাইডেন্টের মতো পারমাণবিক ডুবোজাহাজ। পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রুশদের পরমাণু অস্ত্রসম্ভারও অত্যাধুনিক হয়ে উঠেছে সেই সোভিয়েত যুগ থেকেই। পরমাণু অস্ত্রসম্ভার সাজাতে পশ্চিমা দেশগুলি যখন উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে আর সে জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে, সে সময় নিজস্ব পদ্ধতিতেজ এগিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। পরমাণু অস্ত্র বহনের জন্য জেটবিমান বা স্যাটেলাইট রকেটের পরিবর্তে একটি পুরনো দিনের ট্রেনের উপরেই ভরসা রেখেছে তারা। অক্টোবরের শুরুতে ইউক্রেনের মাটিতে রুশদের একের পর এক শহর দখলের মধ্যেই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, পুতিনের নিউক্লিয়ার ট্রেনটি মস্কোর কাছে দেখা গিয়েছে। ধারণা করা হয়, রাশিয়ার সেই ট্রেনটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক গুপ্ত ইউনিটের মালিকানায় রয়েছে। পুতিনের এই অস্ত্রটি দেখতে আর পাঁচটা সাধারণ ট্রেনেরই মতো। বস্তুত, পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে ট্রেনটি পরিচিত আরটি-টোয়েন্টি থ্রি মোলোডেতস নামে। রুশ ভাষায় মোলোডেতসের অর্থ সাহসী মানুষ। ন্যাটো এই অস্ত্রটির সাঙ্কেতিক নাম দিয়েছে এসএস-টোয়েন্টি ফোর স্ক্যালপেল। ব্রিটিশ মিডিয়ার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলবর্তী এলাকার পুরোটাই ধ্বংস করে দিতে পারে এই ট্রেনটি। এই ট্রেনটি টানা ২৮ দিন ধরে নিজে থেকেই ঘোরাফেরা করতে সক্ষম। আশির দশকে তৎকালীন সোভিয়েতের ইউক্রেনে ইউঝনোয়ে ডিজাইন ব্যুরো এই ট্রেনের নকশা করেছিল। দেখতে একেবারে সাধারণ ট্রেনের মতো। কিন্তু আদতে সে ভয়ংকর। বিদ্যুতেই চলে, কিন্তু কোনো কারণে সংযোগ চলে গেলেও ট্রেনটির কিছু যায় আসে না। বিদ্যুৎ ছাড়া কয়েক ঘণ্টা ছুটতে পারে। রয়েছে তিনটি করে লোকোমোটিভ এবং ওয়াগন। এছাড়াও রয়েছে রয়েছে ১০টি এমআইআরভি ওয়ারহেড, যা থেকে ৫৫০ কিলো টিএনটি বিস্ফোরণ ঘটানো যায়। সঙ্গে রয়েছে চারটি রেলকার। এই ট্রেন আমেরিকার উপকূলবর্তী এলাকার গোটাটাই ধ্বংস করে দিতে পারে। দেখে মনে হয় যাত্রীবাহী ট্রেন কিন্তু তা নয়। সাধারণ ট্রেনের ছদ্মবেশেই ঘুরছে ট্রেনটি। পশ্চিমা মিডিয়ার দাবি, সম্প্রতি ট্রেনটিকে ক্রেমলিনের উত্তর দিকে এগোতে দেখা গিয়েছে এবং তাতে একটি কামানসহ অস্ত্রবোঝাই গাড়ি উঠতে দেখা গিয়েছে। রাশিয়া জুড়ে ঘুরেফিরে বেড়ালেও ‘আরটি-২৩ মোলোডেতস’কে প্রায় চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। সে জন্য এটি ‘ভূতুড়ে নিউক্লিয়ার ট্রেন’ বলেও পরিচিতি পেয়ে গিয়েছে।