ধর্মঘটের ডাক দিলেন পাথর নিয়ে মাঠে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
পরিবেশ ধ্বংস হবে। এ কারণে পাথর উত্তোলন চায় না সিলেটের প্রশাসন। বিভাগীয় কমিশনার পাথর উত্তোলনে ঘোরবিরোধী। জেলা প্রশাসকও অনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের বিপক্ষে। তবে মন্ত্রিপরিষদের সায় মিলেছে আটকা আছে খনিজ উন্নয়ন ব্যুরোতে। ও দিকেই তাকিয়ে আছেন সিলেটের পাথর ব্যবসায়ীরা। নতুন করে তদন্ত চলছে। কিছু করা যায় কিনা- খতিয়ে দেখছে খনিজ উন্নয়ন ব্যুরো। এই অবস্থায় সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সিলেটের ট্রাক পরিবহন মালিকরা। গত দুই বছর ধরে তারা মাঠে। তবে, এবারের মতো কঠোর হননি। এবার আর অপেক্ষা নয়। চোখ রাঙালেন প্রশাসনের দিকে। দিলেন আলটিমেটামও। তারা জানিয়ে দিলেন- পাথর কোয়ারি খুলে না দিলে ৩১শে অক্টোবর থেকে সিলেটে পণ্য পরিবহনে কর্ম বিরতি। সিলেট হচ্ছে পাথর সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে শিল্প কারখানা নেই। আছে কেবল পাথর ও বালু। সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, লোভাছড়াসহ কয়েকটি পাথর কোয়ারি রয়েছে। এসব কোয়ারির পাথর এক সময় চাহিদা মেটাতে দেশের নির্মাণশিল্পে। এখন বিকল্প এসেছে। ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে পাথর। চট্রগ্রাম পোর্ট হয়ে চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসে পাথর। ফলে দেশের পাথরের চাহিদা দিন দিন কমছে। এ কারণে পরিবেশ রক্ষায় গত ৭ বছর ধরে সিলেটের ওই সব পাথর কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ দুই বছর আগে লোভাছড়া লিজে ছিল। ওখানকার উত্তোলন পাথর এখনো সরাতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। তবে, পরিবেশবাদীরা পাথর উত্তোলনের বিপক্ষে। তারা চান- পরিবেশ ধ্বংস করে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে। এ কারণে বেলার পক্ষ থেকে করা হয়েছে একাধিক মামলা। প্রশাসনের তরফ থেকে সিলেটের পাথর লুটপাটকারীদের তালিকাও করা হয়েছিল। কোয়ারি এলাকার জনপ্রতিনিধি স্থানীয়দের মতে- যেসব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়, সেগুলো ভারত সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা। ঢলের তোড়ে ভারতের পাহাড়ি এলাকা থেকে অনেক পাথর ভেসে আসে। এই পাথরগুলো গত কয়েক বছর ধরে জমে আছে নদীগুলোর উৎসমুখে। এতে করে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে কয়েক মাস আগের দুই দফা বন্যায় নদী ভরাট থাকায় মানুষের ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। ফলে এবার পাথর সরাতেই কোয়ারি লিজ চাচ্ছেন তারা। এজন্য দুই সপ্তাহ আগে জাফলংয়ে মানবন্ধন ও সমাবেশে করা হয়েছে। এতে উপস্থিত হয়ে গোয়াইনঘাট আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামসুল আলম যুক্তি তুলে জানিয়েছিলেন- এলসির মাধ্যমে ভারত থেকে পাথর আনতে হচ্ছে। এতে করে সিলেট থেকে প্রতি মাসে হাজার হাজার কোটি টাকা ভারতে চলে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশেরই ক্ষতি হচ্ছে। যদি বাংলাদেশের কোয়ারি থেকে পরিবেশ রক্ষা করে পাথর উত্তোলন করা হয় তাহলে এই টাকাগুলো আর মার্কিন ডলার হয়ে ভারতে যাবে না। বাংলাদেশের রিজার্ভেও সমস্যা হবে না। এ কারনে তিনি পাথর উত্তোলনের পক্ষে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এদিকে, পাথর কেন্দ্রিক ব্যবসা সরাসরি পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন সিলেটের পণ্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। পাথর উত্তোলন না হওয়ার কারনে বিশেষ করে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছেন বলে দাবি নেতাদের। সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বির আহমদ ফয়েজ জানিয়েছেন- আমাদের প্রায় ২০ হাজার ট্রাক ঋণের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়েছিল। সিলেটে শিল্প কেন্দ্রিক ব্যবসা না থাকায় পাথর কেন্দ্রিক পরিবহন ব্যবসা আমাদের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু বছরের পর বছর কোয়ারি বন্ধ থাকার কারনে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা পথে নামার উপক্রম হয়েছেন। এ কারণে বাধ্য হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন- এবার কর্মসূচি পালনে সবাই ঐক্যবদ্ধ। বিশেষ করে জাফলংয়ের ৩৬টি, ভোলাগঞ্জের ১৫টি, বিছনাকান্দির ৭টি ও লোভাছড়ার দুটি সংগঠনের নেতারা ট্রাক মালিক, শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দাবির সঙ্গে একমত রয়েছেন। এদিকে, গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুল দাবি করেছেন- সিলেটের ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং এবং লোভাছড়া পাথর কোয়ারীগুলো থেকে স্বাধীনতা-উত্তর কাল থেকে সারা দেশের পাথর সরবরাহ করা হয়ে আসছিল। প্রায় ১৫ লাখ ব্যবসায়ী-শ্রমিক ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক এ পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় কয়েক বছর ধরে কোয়ারি বন্ধ থাকার কারণে সিলেটের পরিবহণ খাত বিশেষ করে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকদের ব্যবসায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অধিকাংশ ট্রাক মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে অথবা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে তাদের গাড়ি কিনেছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর শাহ সাহেদা আক্তার সিলেটের কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। তার মতে- হয় সিলেটের সৌন্দর্য রক্ষা করুন না হয় পাথর উত্তোলন করুন। দু’টি থেকে একটিকে বেছে নিয়ে নিতে হবে। পাথর উত্তোলনের ফলে কোয়ারির আকৃতি নষ্ট হয়। শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় মানবিক বিপর্যয় ঘটে। প্রশাসনের তদন্তে দেখা গেছে এক শারপিন টিলা থেকে আড়াইশ কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। আর লিে যে টাকা রাজস্ব দেওয়া হয় তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি টাকার পাথর উত্তোলন করা হয়। ফলে সব দিক দিয়েই সমস্যা হচ্ছে। সরকারের লোকসান হচ্ছে। তিনি বলেন, পাথর উত্তোলনের সঙ্গে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা যে কর্ম বিরতির ডাক দিয়েছে সেটি কতটুকু যৌক্তিক এটিও ভেবে দেখার বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।