ফখরুল বলেছেন, দমনপীড়নেও আন্দোলন থামানো যাবে না।
হামলা-গ্রেফতার আর মামলা দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনকে আর দমানো যাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পুলিশের অনুমতি থাকার পরও রাজধানীর পল্লবীতে বিএনপির সমাবেশে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, দমনপীড়নেও থামবে না আন্দোলন। তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, এভাবে হামলা করে গ্রেপ্তার করে কখনোই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, বাংলাদেশের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। গ্রেফতার নেতাকর্মীদের দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তি ও আহত নেতাকর্মীদের সুস্থতা কামনা করে ফখরুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি, আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী শক্তি। শুক্রবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে রোববার রাজধানীসহ দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। মিরপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের হামলার অভিযোগ করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবচাইতে দুঃখজনক ও ভয়াবহ কাণ্ড হচ্ছে, আক্রমণকারীদের প্রতিহত করার জন্য নেতাকর্মীরা যখন দাঁড়িয়ে থাকে, তখন আমাদের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস এবং শেষে বন্দুক দিয়ে গুলিবর্ষণ করে। তিনি বলেন, এই হামলার ফলে আমাদের দলের প্রায় ৭৫ জন আহত হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে ৮ জন। এভাবে সন্ত্রাসী হামলা করে, আহত করে, হত্যা করে, গ্রেফতার করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে কখনোই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না, বিএনপিকে রাজপথ থেকে সরানো যাবে না। হামলার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পল্লবী জোনে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল ডি ব্লকের ঈদগাহ মাঠে। পুলিশ আপত্তি করার পর আমাদের নেতারা এর পরিবর্তে আরও দুটি জায়গার কথা বলেছিলেন- পল্লবী পুরাতন থানা সামনে সেখানের মুকুল ফৌজ মাঠে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ মুকুল ফৌজ মাঠে দুপুর ১টায় এই সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। যখন কর্মী ভাইয়েরা মঞ্চ তৈরি করছিলেন, ঠিক তখনই এই হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, আমরা বার বার বলে আসছি, পুলিশের ভূমিকা হওয়া উচিত রক্ষা করা, নিরপেক্ষ থাকা। কিন্তু পুলিশ পুরোপুরিভাবে এই হামলাকারীদের তথা আওয়ামী লীগের ও সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রকামী যে আন্দোলন সেই আন্দোলনকে তারা নস্যাৎ করার জন্য কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, পুরোপুরিভাবে উস্কানি দিয়ে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করা, বিরোধীদলকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া এবং নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য তারা এই কাজগুলো করছে। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার হরণকারী শক্তি। আওয়ামী লীগ অতীতেও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল এখনো একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে, সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে তাকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগ একই কায়দায় হামলা করেছে, একই কায়দায় মামলা হয়েছে, একই কায়দায় গুলি হয়েছে, একই কায়দায় আক্রমণ করেছে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর, সভা পণ্ড করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যে কাজটি করতে যাচ্ছে তা হচ্ছে এখানে যাতে কোনো নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না হয়। জনগণ নিরপেক্ষ সরকারের যে দাবিতে আন্দোলন করছে সে নিরপেক্ষ সরকার যাতে এখানে কিছুতেই করা না যায়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্য আবারও একটি নির্বাচন করতে চায়, যে নির্বাচনে কোনো বিরোধী দল থাকবে না। বিরোধী দলকে পুরোপুরি মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য নির্মূল করার জন্য এ ধরনের হামলা চালাচ্ছে এবং তাদের সাথে পুলিশ সরাসরি সহায়তা করছে।