Sobujbangla.com | সিলেট ও হবিগঞ্জে চা শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ।
News Head

সিলেট ও হবিগঞ্জে চা শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ।

  |  ১৯:৪৫, আগস্ট ২১, ২০২২

দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা প্রত্যাখ্যান করে নূন্যতম ৩০০ টাকা করার দাবিতে আবারও আন্দোলনে নেমেছে সিলেট ও হবিগঞ্জের চা-শ্রমিকরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে তারা সিলেট বিমানবন্দর সড়ক ও হবিগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল ও সমাবেশ করেন। সিলেট-বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ রোববার সকাল ১১টা থেকে ফের আন্দোলন শুরু করা সিলেট ভ্যালির চা-শ্রমিকরা দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিতে থাকেন। এসময় সড়কের দুইপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর আশ্বাসে ২৪ ঘণ্টার জন্য সড়ক অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করে লাক্কাতুরা চা বাগানের দুর্গা মণ্ডপের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দাবী মানা না হলে আগামীকাল থেকে ফের সড়ক অবরোধ করবেন বলে জানান তারা। এছাড়া পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন শ্রমিকরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চা-শ্রমিকের সন্তান ও আন্দোলনকারীদের একজন দেবাশীষ গোয়ালা বলেন, চা-বাগান মালিকরা আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। ১২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করে আমাদের দয়া দেখাচ্ছেন তারা। কিন্তু আমরা কারও দয়া চাই না। আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি চাই। বর্তমান যুগে কোথাও এই মজুরি নেই। আন্দোলন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখানে শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়ন হয় নাই, সেখানে প্রত্যাহার নয় প্রত্যাখ্যান হওয়া জরুরি। তাই আমরা আমাদের দাবিতে অনড় অবস্থায় আবারও মাঠে নেমেছি।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ১০ কি.মি. যানজট দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা-শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা এলে তা প্রত্যাখ্যান করে ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবিতে হবিগঞ্জের মাধবপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন চা শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের দুপাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। রোববার মাধবপুরের জগদীশপুর গোল চত্বরে হবিগঞ্জের ২৪টি বাগানের প্রায় চার হাজার শ্রমিক মহাসড়ক অবরোধ করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। সরেজমিনে দেখা গেছে, সহস্রাধিক শ্রমিক সড়কে বসে রয়েছেন। কেউ কেউ সড়কে মিছিল করছেন। সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ায় শ্রমিক নেতাদের ‘দালাল’ বলে চা শ্রমিকরা স্লাগান দিচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। অবরোধে মহাসড়কের দুপাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে হাজার হাজার গাড়ি থেমে আছে। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এদিকে চুনারুঘাট মাধবপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসিন আল মুরাদ জানিয়েছেন, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা মহাসড়ক থেকে সরে যাবে। মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম মঈনসহ পুলিশ সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হলে তারা সম্মত হয়েছে। হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়ানোর পর জেলা প্রশাসন চা শ্রমিকদের নিয়ে বসে তাদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এরপরও শ্রমিকরা আজ মহাসড়ক অবরোধ করল। শ্রমিকরা এখন তাদের নেতাদের কথা শুনছে না। একেক দল একেকভাবে আন্দোলন করছে। এরপরও সরকারি কর্মকর্তারা সেখানে অবস্থান করে তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন। ১৩ আগস্ট থেকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট পালন করছেন শ্রমিকরা। মজুরি বাড়ানোর জন্য বাগান মালিক কর্তৃপক্ষ, মজুরি বোর্ড, চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠকে দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে চা-শ্রমিকদের নতুন মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। প্রসঙ্গত, এর আগে চলতি বছরের জুন মাসে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের বৈঠক হয়। সেখানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন শ্রমিক নেতারা। কিন্তু মালিকপক্ষ ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়। যে কারণে শ্রমিক নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর আরও এক মাস পার হয়ে যায়। মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এর প্রতিবাদে ৯-১২ আগস্ট পর্যন্ত টানা চার দিন প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ধর্মঘট পালন করেন চা-শ্রমিকরা। তারপরও মালিকপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলায় ১৩ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সব চা-বাগানে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেন শ্রমিকরা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ