এ যেন এক অচেনা রেলস্টেশন
সারাদেশের ন্যায় করোনার সংক্রমণ কমাতে মানুষদেরকে ঘরে রাখার চেষ্টায় শায়েস্তাগঞ্জেও পালিত হচ্ছে কঠোর লকডাউন। এতে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন। একইভাবে দীর্ঘদিন যাবত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেলপথ। কেবল ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষদের সুবিধার জন্য কয়েকদিন চালু ছিল আন্তঃনগর ট্রেন। ঈদুল আজহার পর একদিন চালু থেকে আবারও সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে সন্ধ্যা হলেই শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশনে পা ফেলার ফুরসৎ মিলত না। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর স্টপিজে ট্রেনের ঝিকঝিক শব্দ আর নানান পেশার হকারদের আনাগোনায় উৎসবমুখর হয়ে উঠত শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন। কিন্তু সেখানে এখন কেবলই সুনসান নীরবতা। সরেজমিনে রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্লাটফর্মের সব ধরণের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। একই সাথে বন্ধ রয়েছে রেলস্টেশনের প্রবেশ পথ। স্টেশনে যাত্রীদের বসার চেয়ারগুলো উল্টো করে রাখা হয়েছে। যাত্রীদের চলাচলের রাস্তা দিয়ে কুকুররা ক্ষুধায় ঘেউ ঘেউ করে দৌড়াচ্ছে। যেহেতু ট্রেন চলে না তাই, রেলস্টেশনের দায়িত্বরতও এখানে কেউ নেই। রেলওয়ে ফাঁড়িতে কর্তব্যরত পুলিশ ডিউটি পালন করছেন না। স্টেশনে বাদাম বিক্রেতা বা ঝালমুড়ি ওয়ালারাও নেই। স্টেশনের দুইপাশেই জ্বলছে আলো। তবে নিরব সন্ধ্যায় রেললাইনের মধ্যেখানে মানুষের আনাগোনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে রেল ক্রসিংয়ের মাঝখানে পথচারীদের চলাফেরা না থাকায় ঘাসগুলো বেশ বেড়ে উঠেছে। এইসব ঘাসে রাতের বেলাও উন্মুক্ত চড়ে বেড়াচ্ছে ছাগল-ভেড়াগুলো। এই মৃদু আলোতেই যেন পুরো শায়েস্তাগঞ্জের নিরবতার চিত্র ফুটে উঠেছে। সন্ধ্যার পরে কোথাও কোথাও দুই একজন হাঁটতে বের হয়েছেন। স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজে নেই আগেরমত আড্ডা। এখানেও আশেপাশে কেউ নেই। স্থানীয় একজন পান দোকানদার চেরাগ আলী জানান, ট্রেন না আসায় তাদের জীবন জীবিকা থমকে গেছে। এই লকডাউনেও পেটের ক্ষুধায় দোকান খুলেছিলেন কিন্তু মানুষজন না থাকায় পকেট খরচের পয়সাও হবে না। তখন সন্ধ্যা ৭টা।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এখন মানুষের আনাগোনা নেই তাই আগেরমত ভিক্ষাও পান না। কখনো মেঘ, কখনো বা বৃষ্টি। এর মাঝে স্টেশনেই পার করে দেন রাত। কখনো কখনো রেলস্টেশনের কর্তারা এসে তাদেরকে তাড়িয়েও দেন। মাঝে মাঝে কেউ কেউ খাবার নিয়ে আসেন সেদিনটা উনার ভাল কাটে।