ভুল বোঝা বুঝিতে গোলাগুলি বিএসএফ বিজেপি
বাংলাদেশের ভেতরে মাছ ধরতে এসে আটক হওয়া জেলেকে ছিনিয়ে নিতে বিএসএফ গুলি করলে আত্মরক্ষার্থে বিজিবি গুলি চালায়। এতে বিএসএফ সদস্য নিহত হয়। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে রাজশাহীতে ১ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পরিচালক লে.কর্নেল ফেরদৌস মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ ঘটনা অনাকাঙ্খিত।
লে.কর্নেল ফেরদৌস মাহমুদ জানান, সকালে চারঘাট থানার শাহরিয়ার খাল নামক স্থানে মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পদ্মা নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মাছ ধরার সময় তিনজন জেলেকে আটকের চেষ্টা করা হয়। এদের মধ্যে দু’জন জেলে পালিয়ে যায়। একজনকে জালসহ আটক করে নদীর বাংলাদেশের পাড়ে নিয়ে আসা হয়। পরে নিশ্চিত হওয়া যায় তারা ভারতীয় নাগরিক।
তিনি বলেন, ঘটনার কিছুক্ষণ পর ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারি ক্যাম্প থেকে চার সদস্যের একটি টহল দল বিজিবির কোনো অনুমতি না নিয়েই স্পিড বোট নিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাংলাদেশের ভেতরে ছয়শ গজের ভেতরে চলে আসে। নদীর এই পাড়ে তারা বিজিবির টহলের নিকট এসে আটক জেলেকে ছেড়ে দিতে বলে। এসময় বিজিবির টহল দল জানায়, আটককৃতকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা ভারতীয় নাগরিককে ছিনিয়ে নিতে চান। আটক জেলেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে তাতে বাধা দেন বিজিবি সদস্যরা। এক পর্যায়ে বিএসএফ জওয়ানরা বিজিবির ওপর ছয় থেকে আট রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার জন্য বিজিবির টহল দলও পাল্টা গুলি চালায়। এতে বিএসএফ সদস্যরা ফায়ার করতে করতে দ্রুত সীমান্তের ওপারে চলে যায়।
তিনি আরও জানান, বিএসএফ কমান্ডেন্ট দাবি করেন, তাদের একজন সদস্য নিহত এবং একজন সদস্য আহত হয়েছে। বৈঠকে ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষই নিজের অবস্থান উপস্থাপন করে। ঘটনার যে বিষয়গুলোতে দু’পক্ষের ঐক্যমত হয়নি সেগুলো নিয়ে তদন্ত করে দেখা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এনিয়ে পরবর্তীতেও পতাকা বৈঠক করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভারতের বেশ কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠক করে ফেরার সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তবে এমন তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান বিজিবির ১ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পরিচালক লে.কর্নেল ফেরদৌস মাহমুদ। তিনি বলেন, পতাকা বৈঠকের কোনো প্রশ্নই আসে না। পতাকা বৈঠক করতে গেলে একটা আনুষ্ঠানিকতার বিষয় আছে। এ বিষয়টা তারাও (বিএসএফ) আমাকে বলেননি। আমি এখানেই প্রথম শুনলাম। ওখানে কোনো পতাকা বৈঠক হয়নি।
লেফটেনেন্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পতাকা বৈঠক হলে এতকিছু হওয়ার সুযোগ ছিল না। কারণ, পতাকা বৈঠক স্বাধীনতার পর থেকে হয়ে আসছে। আর এই বিজিবি আড়াইশ বছরের পুরাতন বাহিনী। বিএসএফ কমান্ডেন্ট পতাকা বৈঠকের কথা বলেননি কিন্তু আমাকে বলার চেষ্টা করেছিলেন যে, আমরা তাদের কল করেছিলাম বলে তারা এসেছিল। তখন আমি উনাদের বলেছি যে, আমাদের লোকজন কেউ ড্রাংক না। জাতিগতভাবে আমরা ড্রাংক হই না। বিজিবি মানসিকভাবেও সম্পূর্ণ সুস্থ বাহিনী। এমন নয় যে, তাদের ডেকে কাছে এনে গুলি করে মেরে ফেলবো। একটা বাহিনীর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর মতো কোনো ঘটনাও ঘটেনি। তারপরেও তাদের কথা আমরা নোট করেছি এবং সেটা তদন্ত করে দেখবো।
আটককৃত ভারতীয় নাগরিক প্রণব মণ্ডলের কাছ থেকে চার কেজি ইলিশ এবং জাল উদ্ধার করেছে।
আটককৃতকে চারঘাট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান বিজিবির এ অধিনায়ক।