আমরা অপেক্ষা করছি বিএনপির এমপিরা শপথ নেবেন: স্পিকার
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরো জোরদার করতে বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগ দেবেন। আমরা অপেক্ষা করছি যে তারা আসবেন এবং শপথ নেবেন। কারণ তারা নির্বাচিত। ভোটাররা তাদের ভোট দিয়েছেন। আমরা মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যমে সংসদে আসতে তাদের উৎসাহিত করছি।
গত সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত নৈশভোজের আগে ভারতের নির্ধারিত একদল সাংবাদিক ও বাসস’র সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন স্পিকার।
স্পিকার ২৬ ও ২৭ মার্চ আইএমএফ আয়োজিত দক্ষিণ এশীয় আইন প্রণেতাদের সামষ্টিক অর্থনীতি ও দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি ২৫ মার্চ এখানে পৌঁছেন এবং আজ বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে নয়াদিল্লী ত্যাগ করেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রায় ১৬ মিনিট অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় স্পিকার বিগত সাধারণ নির্বাচন, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টা, বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যমান সম্পর্ক, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা ও বাণিজ্য এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে বিএনপি সহকর্মীদের স্বাগত জানাতে খুবই আন্তরিক। স্পিকারের পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি যে, সংসদে তাদের সমান অধিকার দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্পিকার বলেন, নির্ধারিত সময়ে তারা সংসদে যোগ না দিলে স্পিকার হিসেবে আমি সংবিধান অনুসরণ করবো।
বাংলাদেশের বিগত সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের নির্বাচন খুবই অংশগ্রহণমূলক হয়েছে এবং এতে সাধারণ মানুষও ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের সচলতার ধারাবাহিকতার দৃষ্টান্ত। স্পিকার বলেন, সংসদ ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে এসেছে। এরমধ্যে কোনরকম ব্যত্যয় ঘটেনি।
এ প্রসঙ্গে তিনি সংসদে নারীর অংশগ্রহণ, প্রথম অধিবেশনে সব স্থায়ী কমিটি গঠন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচক এবং নিম্নআয়ের থেকে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশের উত্তরণ বিষয় উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে। আমরা এখন ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। অবশ্য ২০২০ সাল আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী পালিত হবে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যে খুবই ভালো সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব বিরাজমান। ভারত কেবল আমাদের সুপ্রতিবেশীই নয়, ভালো বন্ধুও। আমরা মনে করি আগামী দিনে এই বন্ধুত্ব আরও জোরদার হবে।
কিছু অমিমাংসিত বিষয় সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সংসদের স্পিকার বলেন, আমরা সব সময় বিশ্বাস করি যে, আলোচনা, সমঝোতা ও সংলাপের মাধ্যমে যেকোন ইস্যু সমাধান করা সম্ভব।
তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমার সরকারের সময়ক্ষেপণে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এ বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই।
স্পিকার বলেন, মিয়ানমারকে অনেক শর্ত মেনে চলতে হবে। তাদেরকে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে বোঝানোর চেষ্টা করছে।
হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আবদুস শহীদ, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজী, সাগুপ্তা ইয়াসমিন এমপি, আনোয়ারুল আবেদীন খান এমপি ও আহসানুল ইসলাম (টিটু) এমটি প্রতিনিধি দলে ছিলেন।
নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ও মিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।