চিরনিদ্রায় শায়িত ইকবাল আহমদ চৌধুরী
চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, স্কাউট ব্যক্তিত্ব বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী। সোমবার বিকেলে গোলাপগঞ্জ সরকারি এমসি একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রফিপুরস্থ নিজ গ্রামে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। শেষ শ্রদ্ধা ও বিদায় জানাতে জানাযায় অশ্রুসিক্ত লাখো মানুষের ঢল নামে। এমসি একাডেমির মাঠ লোকে লোকারণ্য দেখা যায়। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জানাজা পূর্বে দুপুর আড়াইটায় উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে তাঁর প্রতি উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে দলীয় ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর একে একে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর, উপজেলা পরিষদ, গোলাপগঞ্জ পৌরসভা, ১১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিভিন্ন শ্রেণিপেশার হাজারো মানুষ শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জানাযায় ইমামতি করেন গোলাপগঞ্জ বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা জামিল আহমদ। জানাযা পূর্বে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্জ¦ শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নাসির উদ্দিন খান, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম কামাল, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ চৌধুরী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার বদরুল ইসলাম শুয়েব, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাড. আব্বাস উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মকসুদুল আউয়াল, পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল, গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম কবীর, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সারওয়ার হোসেন, সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, ইকবাল চৌধুরীরর ছোট ভাই মঞ্জুর শাফি চৌধুরী এলিম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনসুর আহমদ, পৌরসভার সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী রিংকু, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ প্রমুখ। এর আগে বাদ জোহর সিলেট হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার মসজিদ প্রাঙ্গণে ১ম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটের সময় সিলেটের বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিলো ৯০ বছর। তিনি ১৯৪২ সালের ১৭ জুলাই গোলাপগঞ্জ উপজেলার রফিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম মহিবুর রহমান চৌধুরী ও মাতার নাম জুবেদা খাতুন চৌধুরী। এ্যাড. ইকবাল আহমদ চৌধুরী ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ২০০৪ সাল থেকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ছাত্রজীবনে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে ’৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন, ৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ গোলাপগঞ্জ উপজেলার সর্বস্তরের এবং সর্বদলের মানুষের নিকট জনপ্রিয় ছিলেন। এজন্য সাধারণ মানুষের যেকোন আপদে-বিপদে তিনি সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য নির্ভরতার স্থানে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর দুই ছেলে ও স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দুই নাতির সাথেই তিনি ছিলেন। এদিকে, তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রোববার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এমপি ইকবাল আহমদ চৌধুরীর পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবার, পরিজন, আত্মীয়-স্বজন সহকর্মী, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।