পুলিশের সেবা প্রার্থীরা যেন হয়রানি না হয়: রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পুলিশের উদ্দেশে বলেছেন, “সেবা প্রার্থীরা যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে পুলিশ কর্মীদের খেয়াল রাখতে হবে।” মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় “পুলিশ সপ্তাহ ২০২২” উপলক্ষে বঙ্গভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি দেয়া এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ বিপদে পড়লে আইনি সেবা নিতে পুলিশের কাছে যায়। আপনারা তাদের সমস্যা এবং অভিযোগগুলি খুব মনোযোগ সহকারে শুনবেন এবং তাদের (বিপন্ন ব্যক্তিদের) আন্তরিকভাবে আইনী পরিষেবা দিতে দ্বিধা করবেন না।” “দক্ষ পুলিশ, সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ” প্রতিপাদ্য নিয়ে ২৩ থেকে ২৭ জানুয়ারি- ২০২২ পুলিশ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “আপনি ‘বন্ধু’ হিসাবে জনগণের পাশে থাকবেন। মানবিক পুলিশ হোন এবং জনগণকে সেবা প্রদান করে এবং সত্যিকারের শক্তিতে পরিণত হওয়ার জন্য তাদের আস্থা অর্জন করে আপনার দায়িত্ব পালন করুন।” রাষ্ট্রপ্রধান মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশপ্রেম, সততা ও পরম নিষ্ঠার সাথে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশ পুলিশকে একটি আধুনিক ও উন্নত দেশের উপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, তথ্য প্রযুক্তির (আইটি) প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সেবায় প্রবেশও সহজতর হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সময়োপযোগী পুলিশি সেবা প্রদানের জন্য ইতিমধ্যে নতুন ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এর ফলে পুলিশের কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে এবং জনগণ সহজেই ভালো পুলিশি সেবা পাবে। কমিউনিটি পুলিশিং এবং বিট পুলিশিংয়ে জনগণের আরও সম্পৃক্ততার উপর জোর দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, পুলিশের একার পক্ষে সমাজ থেকে অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশকে একটি ‘জনবান্ধব পুলিশ ও মানবিক পুলিশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে আপনাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, দেশ ইতিমধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে।” রাষ্ট্রপতি বলেন, “গবেষণা, উদ্ভাবন এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশকে এগিয়ে যেতে হবে।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশকে নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনে সমৃদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশের জন্য একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।” প্রযুক্তি বিকাশের ধারায় বর্তমান বিশ্বে অন্যান্য অপরাধের মধ্যে দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এবং বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে সাইবার ক্রাইম বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় আমাদের পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।” আবদুল হামিদ বলেন, “ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশ সদস্যদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত করতে হবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম বড় সাফল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে, এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।” মাদকের অপব্যবহারকে একটি বড় সামাজিক ব্যাধি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেশের যুব সমাজের একটি অংশ পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহায়তায় মাদক সংক্রান্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।” রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “এ ব্যাপারে পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এ ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিবেচনা করতে হবে।” রাষ্ট্রপতি বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীতে সম্মুখ-সারির যোদ্ধা হিসেবে জনগণের সেবা করার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।” তিনি দেশের জনগণের সেবা, নিরাপত্তা ও নিরাপত্তার জন্য জীবন উৎসর্গকারী সকল নির্ভীক পুলিশ সদস্যদের বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো: আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।