Sobujbangla.com | সিলেটে বিক্রি হচ্ছে চুরাই মোবাইল
News Head

সিলেটে বিক্রি হচ্ছে চুরাই মোবাইল

  |  ১৬:০৪, নভেম্বর ২৩, ২০১৯

ভারতের বিভিন্ন জায়গায় চুরি হওয়া মোবাইল ফোন সিলেট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে। এসব মোবাইল বিক্রি হচ্ছে সিলেটের মোবাইল দোকানগুলোতে। পুলিশের সাম্প্রতিক এক অভিযানে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রায় তিন মাস আগে সিলেট মহানগর এলাকার আব্দুল মোনাইম রাহি ও আহমেদ সামি নামের দু’জন যুবক ভারতে বিপুল পরিমাণ চোরাই মোবাইলসহ গ্রেফতার হয়। কলকাতার লালবাজারে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ২০৬টি মোবাইলসহ গ্রেফতার হয় তারা।
এছাড়া, গত ১৮ নভেম্বর মহানগর কোতোয়ালি থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মহানগর পুলিশের ভূমি শাখায় কর্মরত এএসআই জাহাঙ্গীর হোসেন ও স্থানীয় একটি পত্রিকায় কর্মরত মোশারফ হোসেন খানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় পুলিশ তাদের কাছ থেকে ভারতে চুরি হওয়া বিভিন্ন ব্রান্ডের ২৭৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। এসব ফোনের বাজার মূল্য ৪১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাজার আলী শেখ (উত্তর) জানান, গ্রেফতার এএসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এ অভিযোগে যাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে তারা হলো, কোতোয়ালি থানাধীন ৬৮ নম্বর বাসার পশ্চিম শাহী ঈদগাহ এলাকার মোশারফ হোসেন খান (৩৮), দক্ষিণ সুরমার কায়স্তরাইল এলাকার বাসিন্দা এএসআই জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৪), কোতোয়ালি থানার কাজিটুলা এলাকার মক্তবগলীর ৪৪ নম্বর বাসার ফারুক মিয়া ও একই থানার জহিরুল ইসলাম সোহাগ (৩৯)।
অভিযুক্ত আব্দুল মোনাইম রাহি সিলেটের শাহপরান থানার মিরাপাড়া এলাকার আব্দুল মালিক বকুলের ছেলে। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন মিরাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সামসুল ইসলামের ছেলে আহমেদ সামি। অভিযুক্ত রাহির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চোরাই মোবাইলসহ ভারতে গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘যদি আমি অপরাধ করতাম তাহলে ভারতের পুলিশ আমাকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতো।
পুলিশ জানায়, ভারতে চুরি হওয়া বিভিন্ন ব্রান্ডের ২৭৯টি মোবাইল উদ্ধারের ঘটনায় কোতোয়ালি থানার এসআই অনুপ কুমার চৌধুরী বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে পুলিশের এএসআইসহ সাতজনকে আসামি করে একটি এবং শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধ পথে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন আনার অপরাধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দু’জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, পরিত্যক্ত একটি প্রাইভেটকার উদ্ধারের সূত্র ধরে সিলেট মহানগর পুলিশ অভিযানে নামে। গত ১৮ নভেম্বর রাতে দক্ষিণ সুরমার কায়স্তরাইল এলাকা থেকে এএসআই জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রথমে আটক করা হয়। এ সময় জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে জব্দ করা হয় তার ব্যবহৃত আরওয়ান ফাইভ মোটরসাইকেল। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাজিটুলা এলাকার মক্তবগলীর ৪৪ নম্বর বাসার পঞ্চম তলা থেকে ফারুক মিয়াকে আটক করা হয়। এ সময় তিনটি কার্টন ভর্তি ভারতীয় স্যামসাং, ভিবো, অপো ও এক্সজামিসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের ২৭৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
দু’টি মামলার বাদী কোতোয়ালি থানার সাব ইন্সপেক্টর অনুপ কুমার চৌধুরী জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছে যেসব মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে এগুলো ভারতে চোরাই মোবাইল ফোন। এছাড়া প্রতিটি মোবাইলে পাসওয়ার্ড (গোপন নম্বর) ও প্যাটার্ন লক লাগানো রয়েছে। যার কারণে আইএমইআই (মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি) ও মোবাইল ফোনগুলোর মডেল জব্দ তালিকায় উল্লেখ করা সম্ভব হনি।
তিনি জানান, গ্রেফতার চারজনের মধ্যে মহানগর পুলিশের ভূমি শাখায় কর্মরত এএসআই জাহাঙ্গীর ও স্থানীয় একটি পত্রিকায় কর্মরত একজন রিপোর্টার রয়েছেন। তারা ভারত থেকে চোরাই মোবাইল কম দামে কিনে সিলেটের সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর খোকন দাস জানান, দু’টি মামলায় ৯ জনকে এজহার নামীয় আসামি করা হলেও পুলিশ ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করেছে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে আর কারা জড়িত সে বিষয়ে তথ্য নেওয়ার জন্য দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলায় বুধবার (২০ নভেম্বর) আদালতে গ্রেফতার চারজনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিচারক তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম (গণমাধ্যম) বলেন, বিষয়টি পুলিশের বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ